Wednesday, February 11, 2009

প্রাকৃতিক শৈবাল স্পাইরম্নলিনা” ব্যবহারে ৯০ শতাংশ খরচ কমাবে আর্সেনোকোসিস রোগের

গুলশান আনোয়ার প্রধান,( বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)

বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ মারা যায় বিভিন্ন রোগে। আর আর্সেনোকোসিস নামক ভয়াবহ দুরারোগ্য রোগে আক্রানত্ম হচ্ছে দেশের বিভিন্ন সত্মরের মানুষ। এমনি সময় এই রোগে আক্রানত্ম রোগীদের জন্য আশার বানী নিয়ে আসল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এর একদল গবেষক। তাঁরা বিভিন্ন কৃষি-উপজাত বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করে অতি স্বল্প খরচে স্পাইরম্নলিনা তৈরি করে তা দিয়ে আর্সেনোকোসিসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বিস্ময়কর সাফল্য লাভের পথ উন্মোচন করেছেন। এটি কিভাবে সল্প মুল্যে বাজারজাত করা যায় তার জন্য ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আউয়াল আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আউয়াল ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে ইউ.এস.ডি.এ. এর ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা অর্থায়নে ৪ বছর মেয়াদী “পশু এবং খাদ্য দ্রব্যে আর্সেনিক শনাক্তকরন এবং সর্বনিম্ন খরচে কৃষিবর্জ্য পদার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে পশু এবং মানুষের শরীর থেকে আর্সেনিকের বিরূপ প্রভাব দুরীকরণের ওপর গবেষণা” শীর্ষক একটি শিরোনামে গবেষণা শুরম্ন করেন। তবে তিনি বিগত দশ বছর থেকে আর্সেনিকের ওপর কাজ করেছেন। ফলে প্রকল্পের সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই তিনি তাঁর কাজে আশাতীত সফলতা লাভ করেন। এ গবেষণা কাজে তার সহযোগী প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন- বাকৃবির প্রফেসর ড. মাহবুব মোসত্মফা, প্রফেসর ড. মো. ইদ্রিস মিয়া, প্রফেসর ড. মো. আহ্সান বিন হাবিব। এছাড়াও দুইজন উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা আবুল খায়ের ও অমলেন্দু ঘোষ এ প্রকল্পের অধীনে পি.এইচ.ডি. কোর্সে গবেষক হিসেবে কাজ করছেন।

জানা যায়, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সনে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (BCSIR) পাইলট পস্নান্ট আকারে রাসায়নিক মিডিয়া ব্যবহার করে স্পাইরম্নলিনা উৎপাদন শুরম্ন করা হয়। স্পাইরম্নলিনা একটি নীলাভ সবুজ শৈবাল যা প্রোটিন, মিনারেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এখন পর্যনত্ম মানুষের খাদ্য তালিকায় উপস্থিত খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে স্পাইরম্নলিনায় প্রোটিনের পরিমাণ সর্বাধিক (প্রায়৭২%)। বিগত কয়েক বছর যাবৎ স্পাইরম্নলিনা দিয়ে আর্সেনিকে আক্রানত্ম রোগীদের চিকিৎসা করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু সায়েন্স ল্যাবরেটরীতে তৈরিকৃত স্পাইরম্নলিনার মূল্য খুবই বেশি (প্রতি কেজি স্পাইরম্নলিনা পাউডার ২০০০.০০ টাকা), যা দরিদ্র মানুষের পক্ষে ক্রয় করা বেশ কষ্টসাধ্য। কৃষি-উপজাত দ্রব্য যেমন সয়ামিল, চিনি কলের উচ্ছিষ্ট্য, সরিষার খৈল, মিষ্টির দোকানের বর্জ্য পদার্থ থেকে তৈরিকৃত স্পাইরম্নলিনার এ উৎপাদন খরচ ৯০ শতাংশ কমানো সম্ভব।

ড. আউয়াল এর নির্মিত প্রাকৃতিক পরিবেশে সূর্যের কিরনের মাধ্যমে স্পাইরম্নলিনা তৈরির জন্য গবেষণাগারের ছাদের উপর একটি স্পাইরম্নলিনার কালচার পুকুর রয়েছে। সেখানে স্পাইরম্নলিনা উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ কোসারিক মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করেন। এই স্পাইরম্নলিনা তিনি সর্বপ্রথম মুরগির শরীরে প্রয়োগ করেন এবং উক্ত মুরগির মাংসে আর্সেনিকের পরিমাণ কমানোর ব্যাপারে নিশ্চিত হন। এরপর তিনি তা ছাগলের শরীরে প্রয়োগ করে ছাগলের দুধেও আর্সেনিকের পরিমাণ কমানোর ব্যাপারে নিশ্চিত হন। তিনি জানান, স্পাইরম্নলিনা খাওয়ানোর পর তা শরীরে প্রবেশ করে তা কিলেশন পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থ হিসেবে আর্সেনিক দেহ থেকে বের করে দেয়। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম আর্সেনিক ধরা পড়ে ১৯৯৩ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ৬১ জেলাতেই বেশিরভাগ নলকূপের পানিতে আর্সেনিক সনাক্ত করা হয়েছে। নলকুপের পানি ছাড়াও শাকসবজি, ধানের কুড়া, খড়, গরম্নর দুধ, মুরগির মাংস ইত্যাদি অর্থাৎ মানুষ ও পশুপাখির খাদ্য তালিকায় আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এ মাত্রা সহনীয় পরিমাণ (০.০৫মি.গ্রা./লিটার) ছাড়িয়ে গেছে। ড. আউয়াল সর্বপ্রথম ২০০৩ সালে গরম্নর দুধে আর্সেনিকের উপস্থিতি সনাক্ত করেন। সুতরাং বর্তমানে এটা নিশ্চিত যে, শুধু পানি আর্সেনিক মুক্ত করলেই আর্সেনিক সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বরং বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত কিছু আর্সেনিক ঢুকছেই এবং তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমা হচ্ছে। এই অল্প অল্প করে জমা হওয়া আর্সেনিকই এক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাসায়নিক পদার্থের বদলে জৈব পদার্থ ব্যবহৃত মিডিয়ায় উৎপন্ন স্পাইরম্নলিনা খাওয়ানোর ফলে দেহে এর পরিপাক সহজ হবে ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে এবং ক্রয়মূল্যও এদেশের দরিদ্র মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে। এ পদ্ধতিতে স্পাইরম্নলিনার উৎপাদন খরচ ২০০ টাকা হয় বলে জানান ড. আউয়াল। প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে বলে জানান তিনি।

প্রকল্পের কাজ শেষ হলে খাদ্যে আর্সেনিকের পরিমাণ নির্ণয় করে আর্সেনিকে আক্রানত্ম রোগের উৎপত্তির একটি পূর্বাভাস এবং স্পাইরম্নলিনা ব্যবহার করে এ রোগ থেকে মুক্তির একটি সহজ উপায় জানা যাবে বলে তিনি মনে করেন।

এছাড়াও তিনি জানান, এই প্রযুক্তির দ্বারা বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে।
সূত্রঃ http://www.farmhouse-bd.com

No comments: